প্রাইভেট নার্সিং নাকি সেকেন্ড টাইম, এ প্রশ্নের উত্তর সোজাসাপ্টা: যদি আপনি ৩-৫ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রাইভেট নার্সিং-এ পড়তে পারেন, তাহলে আপনার জন্য প্রাইভেট নার্সিং, আর যাদের এরকম টাকা নেই, তাদের জন্য সেকেন্ড টাইম।
সরকারি বা বেসরকারি (BNMC অনুমোদিত) যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হওয়ার পর সবাই সমান। তাই আপনি যদি ক্যারিয়ার হিসেবে নার্সিং-কে বেছে নেন, সেকেন্ড টাইমের জন্য সময় নষ্ট না করে বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়ে যান।
প্রাইভেট নার্সিং কলেজে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের এর খরচ পড়বে ৩-৫ লক্ষ টাকা, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে খরচ হবে ৩-৪ লাখ টাকা, এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে খরচ হবে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মতো। এটা একাডেমিক খরচ। এর সাথে যোগ হবে আপনার প্রতি মাসে খাওয়া, থাকা, ও চলাফেরা বাবদ খরচ।
যে কোর্সে ভর্তি হতে চান, মোট খরচ হিসাব করে যদি মনে হয় আপনি ও আপনার পরিবার সেটা মেটাতে পারবেন, তাহলে দেরি না করে প্রাইভেট নার্সিং এ ভর্তি হয়ে যান। অন্যথায়, সেকেন্ড টাইম বা থার্ড টাইমের প্রিপারেশন শুরু করে দিন। সেকেন্ড বা থার্ড টাইমে সময় পাবেন আনুমানিক ৯-১০ মাস।
কীভাবে প্রাইভেট নার্সিং বাছাই করব?
প্রাইভেট বা বেসরকারি নার্সিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে যাচাই করবেন:
১. আপনার প্রথম কাজ হবে আপনি যে যে বেসরকারি নার্সিং(BNMC অনুমোদিত) শর্টলিস্ট করেছেন, সেগুলোতে সরাসরি যাওয়া।
২. পর্যাপ্ত মানসম্মত শিক্ষক আছেন নিশ্চিত করা।
৩. সিনিয়রদের মতামত নেয়া; টিচার ঠিকমতো কলেজে আসেন কি না, পরীক্ষায় পাশ-ফেইল করানোর অনুপাত কেমন, শিক্ষার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে কি না, আগে পাশ করা শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা কী ইত্যাদি খোঁজখবর নেয়া।
৪. কোনো হিডেন চার্জ আছে কি না নিশ্চিত করা।
দ্রষ্টব্য: ৫০%, ৬০% ছাড়ে ভর্তির প্রলোভনে পড়ে নিজের জীবন ও ক্যারিয়ার ধ্বংস করবেন না। এক দেড় লাখ টাকায় যেসব বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ৩/৪ বছরের নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করে দেবেন আশা দিচ্ছেন, এদের বেশিরভাগই ভুয়া।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং পড়ে সরকারি চাকরি করা যাবে কি?
হ্যাঁ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং পড়ে সরকারি চাকরি করা যাবে। সরকারি বা বেসরকারি (BNMC অনুমোদিত) প্রতিষ্ঠান কোনো বিষয় না, পাশ করে বের হওয়ার পর সবাই সমান। তিনটি নার্সিং কোর্সের ক্ষেত্রে কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পরে, Bangladesh Nursing and Midwifery Council কর্তৃক অনুষ্ঠিত রেজিষ্ট্রেশন/লাইসেন্সিং/RN পরীক্ষায় পাশ করলে/কৃতকার্য হলে, পরবর্তীতে সরকারি/বেসরকারি জবের জন্য আবেদন করা যায়। তবে, সরকারি নার্সিং জবের জন্য আলাদা লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা সহ কতো গুলো প্রসেস রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্স সম্পূর্ণ করে সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তাই শতভাগ।
কীভাবে সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন?
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতি আপনি ঘরে বসে নিজে নিজে শুরু করে দিতে পারেন। তবে ফিজিক্যাল কোচিং বা অনলাইনে কোচিং করেও আপনি আপনার সেকন্ড বা থার্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
আপনি যেহেতু সেকেন্ড বা থার্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষায় অংশ নেবেন, আশা করা যায় নার্সিং প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে আপনার কিছু আইডিয়া হয়ে গেছে। এখন শুধু আপনার দরকার সঠিক গাইডলাইন, নিয়মিত টপিকভিত্তিক মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেয়া, আর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা। এজন্য একজন মেন্টর পেলে সবথেকে ভালো হয়। নিউরন নার্সিং-এ এ কাজটা যদিও রাজু স্যার করে থাকেন, আপনি কাউকে না পেলে নিজেই নিজের মেন্টর হবেন। উভয় পরিস্থিতিতেই আপনাকে নিজের পড়াশোনার মানোন্নয়ন ও অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দিকে নজর রাখতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছুদিন পড়াশোনার এটেনশন ধরে রাখেন শিক্ষার্থীরা, এরপর আবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অথবা ফ্লো হারিয়ে ফেলেন। পূর্বের ঐ ফ্লো-তে শিক্ষার্থীরা চাইলেও আর যেতে পারেন না, অনেক সময় পারলেও তা সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে যায়। এজন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে আপনাকে প্রতিদিন অল্প কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ উপায়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে নার্সিং এ চান্স পাওয়া আপনার জন্য ডালভাত হয়ে যাবে।
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আপনাকে যা করতে হবে তা নিচে পয়েন্টাকারে উল্লেখ করা হলো:
১. মানসিক চাপ ও টেনশনকে বিদায় বলতে হবে
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনাকে সবার আগে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে।
আপনি নার্সিং এ চান্স না পেলে কী হবে এটা চিন্তার বদলে আপনার চিন্তা হবে নার্সিং এ ভর্তি হওয়ার পর কী হবে। চিন্তা যেন চাপা টেনশন না হয়ে ফিরে আসে, বরং চিন্তা হবে চান্স পাওয়ার হাতিয়ার। আপনি ভালো চিন্তা করবেন এবং সেটা পেতে গেলে এই মুহুর্তে আপনাকে পড়াশোনা করা লাগবে এটা মাথায় রাখবেন। দেখবেন, পড়াশোনা হবে। আর নার্সিং এ চান্স পেতে আপনাকে সারাদিন পড়াশোনা করতে হবে না। নিয়মমাফিক ৬-৮ ঘন্টা পড়াশোনা করলে আপনার চান্স পাওয়া ঠেকানো দুঃসাধ্য।
আজ কোন টপিকটা শেষ করবেন, মডেল টেস্ট দেবেন, কোন খাবারটা খাবেন, এদিকে মনোনিবেশ করুন। মানসিক চাপ কমাতে পড়ার মাঝে বিরতি নিন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম করুন। লম্বা করে দম নিন এবং ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। অন্তত দিনে দশ বার এই এক্সারসাইজ করুন। মানসিক চাপ অনেক কমে যাবে। আর মানসিক চাপ কিছু থাকবেই। এটা জীবনের অংশ। আমাদের লক্ষ্য হবে মানসিক চাপ কমিয়ে বা চাপমুক্ত হয়ে জীবনে চলার পথে অগ্রসর হওয়া।
২. নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনাকে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনার আসলে কোনো বিকল্প নেই, সে আপনি ফার্স্ট টাইম পরীক্ষা দিন, সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিন, আর থার্ড টাইম পরীক্ষা দিন। নার্সিং এ পড়তে চান মানে আপনি ইতোমধ্যে আপনার চিন্তায় একজন নার্স। তাই চিন্তা করবেন নার্সের মতো করে। লজিক্যালি আপনাকে চিন্তা করতে হবে, ইমোশন দিয়ে নয়।
নিয়মিত পড়াশোনা আপনার মস্তিস্ককে ধারালো করে, টপিক সম্পর্কে আপনাকে ভালো ধারণা রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সময় ধরে পড়াশোনা আপনাকে কনটেক্সট বুঝতে সাহায্য করে, আপনার মাসল মেমরি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
তাই নিয়মিত পড়াশোনা করুন। সপ্তাহে কী কী পড়বেন ঠিক করুন। প্রতিদিনের একটা রুটিন সাজিয়ে ফেলুন: আজকে এই চ্যাপ্টারটা পড়বো, কালকে এই টপিকটা শেষ করবো এবং এভাবে পুরো সপ্তাহে এই কয়টা বইয়ের এই এই পার্ট কমপ্লিট করে ফেলব। সপ্তাহান্তে একবার অগ্রগতি দেখুন। যে সকল বিষয় গুলো মনে রাখা বেশ কষ্টের সেগুলো ছড়া, ছন্দ সাজিয়ে পড়ুন।
৩. সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি আরাম করুন
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সপ্তাহে একদিন রেস্ট নিন। বাইরে ঘুরতে বের হোন; পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ও অন্যান্য প্রিয়সঙ্গের সাথে সময় কাটান। পড়াশোনা, পরীক্ষা সবকিছুর কথা সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে যান। সপ্তাহান্তে একদিনের এরকম রেস্ট আপনাকে আবার পড়াশোনার নতুন উদ্যম তৈরি করে দেব।
৪. শরীরচর্চা, ঘুম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসে নিজেকে গড়ে তুলুন
সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। শরীরচর্চা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে, মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ সচল রাখে। ফলে স্মৃতি ধরে রাখাও অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। তাই নিয়মিত কিছু সময় হাঁটুন কিংবা সাইকেল চালান। সেকেন্ড টাইম নার্সিং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নিয়মিত পরিমিত ঘুমান। এটি শুধু নার্সিং নয়, বরং আপনার সমস্ত জীবনের জন্যই কাজে দেবে।
অন্যদিকে খাদ্য আমাদের ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই প্রতিদিন সুষম খাবার খান। এতে আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে এবং আপনার শারীরিক ও মানসিক ব্যাল্যান্স থাকবে।
সেকন্ড/থার্ড টাইম নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আমাদের পুর্ণাঙ্গ নার্সিং গাইডটি পড়ুন। অনলাইন বা অফলাইন ভর্তি সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন রাজু স্যারের নিউরন নার্সিং এর এই নম্বরে 01728011551।