নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দুই ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়: ১. বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি, ২. মানসিক প্রস্তুতি। নার্সিং ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ নির্ভর, তাই মূল বইয়ের পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে, কোন ধরনের প্রশ্ন আসছে এটা পর্যালোচনা করে পাঠ্যবই থেকে টপিকগুলো পড়ে ফেলতে হবে, নিয়মমাফিক একটা রুটিনে পড়তে হবে ও চলতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য সবার আগে পড়তে হবে পাঠ্যবই। বিগত বছরের প্রশ্ন এনালাইসিস করে বোর্ড বই বা মেইন বই থেকে টপিকগুলো বাছাই করে ফেলুন। নোট রাখুন। কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে যাওয়ার আগে এই টপিকগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝা এবং পর্যালোচনা করার দিকে মনোনিবেশ করুন। কারণ প্রশ্নকর্তারা পাঠ্যবই থেকে প্রশ্ন করে থাকেন।
বিএসসি ইন নার্সিং এর জন্য এসএসসি’র বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার, সাধারণ গণিত এবং এইচএসসির পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং সাধারন জ্ঞানের যেকোনো একটি বই পড়তে হবে। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং/ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারির জন্য এসএসসি’র বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার, সাধারণ গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞানের যেকোনো একটি বই পড়তে হবে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমত দুইটি কোর্সের জন্য নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতি নেয়। কোর্স দুইটি হচ্ছে BSc in Nursing এবং Diploma in Nursing। Diploma in Nursing এর আবার দুইটি ভাগ: Diploma in Nursing Science and Midwifery ও Diploma in Midwifery। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীরা তিনটি কোর্সের যেকোনো একটিতে ভর্তির জন্য নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়।
Science ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা সাধারণত BSc in Nursing কোর্সে পরীক্ষা দেয়। এই কোর্সে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু Diploma in Nursing Science and Midwifery ও Diploma in Midwifery কোর্স দুটিতে Science/Arts/Commerce/মাদ্রাসা/কারিগরি শিক্ষা যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীই আবেদন করতে পারবেন ও পড়তে পারবেন। Diploma in Midwifery কোর্সটিতে শুধুমাত্র মেয়েরা পড়তে পারেন।
কোর্সের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটা কমন যায়গা আছে। সেটা বোঝার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে নার্সিং পরীক্ষার মানবণ্টন কীভাবে হয়।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট ১৫০ নম্বরের উপর ভর্তি পরীক্ষার মেরিট লিস্ট হয়: ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা এবং ৫০ নম্বর এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষার জিপিএ থেকে নেয়া হয়। নিচে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষার মানবন্টন দেয়া হলো:
BSc in Nursing (৪ বছর মেয়াদী) | Diploma in Nursing Science and Midwifery/ Diploma in Midwifery (৩ বছর মেয়াদী) |
বাংলা – ২০ | বাংলা – ২০ |
ইংরেজী – ২০ | ইংরেজী – ২০ |
গণিত – ১০ | গণিত – ১০ |
বিজ্ঞান (পদার্থবিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান,রসায়ন) – ৩০ | সাধারন বিজ্ঞান – ২৫ |
সাধারন জ্ঞান – ২০ | সাধারন জ্ঞান – ২৫ |
আমরা দেখতেই পাচ্ছি, বাংলা, ইংরেজী, গণিত, ও সাধারণ জ্ঞানের একটা কমন অংশ বিএসসি ও ডিপ্লোমা দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীকেই পড়তে হয়। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই শুধু পার্থক্যটা তৈরি হয়। বিএসসি-র জন্য পদার্থবিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, ও রসায়ন পড়তে হয়। আর ডিপ্লোমার জন্য পড়তে হয় সাধারণ বিজ্ঞান।
নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতির জন্য কী কী বই পড়তে হবে তা জানতে চাইলে আরও জানতে হবে প্রশ্ন কোথা থেকে হয় এবং প্রশ্ন কারা করেন।
নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্ন হয় মূল বই থেকে এবং প্রশ্ন করে থাকেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ভর্তি পরীক্ষায় তারা যাচাই করা করেন একজন শিক্ষার্থীর ব্যাসিক কেমন অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী বিগত বছরগুলোতে পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে থাকা বিষয়গুলো সম্পর্কে কতটুকু দক্ষতা অর্জন করেছেন।
এজন্য শিক্ষার্থীকে সবার আগে ডিসিশন নিতে হবে তিনি কি বিএসসি ইন নার্সিং এর জন্য প্রিপারেশন নেবেন নাকি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এর জন্য প্রিপারেশন নেবেন।
বিএসসি ইন নার্সিং এর জন্য মূলত এইচএসসি ফোকাসড একটা প্রিপারেশন নিতে হয়। তাই তাকে এইচএসসির মূল বইগুলোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে। পাশাপাশি এসএসসির মূলবই বা পাঠ্যবইগুলোও তাকে পড়তে হবে। অন্যদিকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এর জন্য মূলত এসএসসি ফোকাসড একটা প্রিপারেশন নিতে হয়।
তাই একজন শিক্ষার্থী যদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এর জন্য প্রিপারেশন নেন, তাকে শুধুমাত্র নবম দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইগুলো পড়লেই হবে।
গণিতের ক্ষেত্রে মূলত নবম-দশম শ্রেণীর বই থেকে প্রশ্ন আসে। বিএসসি ও ডিপ্লোমা দুই শ্রেণীকেই গণিতের জন্য সেইম প্রিপারেশন নিতে হয়।
সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিএসসি ইন নার্সিং বা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এর ক্ষেত্রে আলাদা কোনো বই নেই। বাজার থেকে যেকোনো সাধারণজ্ঞানের বই কিনে পড়া শুরু করতে পারেন। তবে সাধারণ জ্ঞান যেহেতু চলমান ঘটনাবলির সাথে মিল থাকে, সেজন্য চোখ কান খোলা রাখলে আর টুকিটাকি সংবাদপত্র পড়লে সাধারণ জ্ঞানে ভালো মার্ক পাওয়া সহজ।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে?
নার্সিং এর বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য সর্বপ্রথম মূল বইয়ের ওপর সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মূলবইয়ের ওপর ভালো দখল আনার পাশাপাশি কোনো একটি গাইড সহায়ক বই হিসেবে পড়তে হবে। বিএসসি এবং ডিপ্লোমার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আলাদা হলেও প্রশ্নপত্র মূলবই বা মেইন বই বা বোর্ড বই থেকেই হবে। তাই বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মূলবই পড়তে হবে।
পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করতে হবে; কোন টপিক থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে এটা দেখতে হবে। এতে প্রশ্নের প্যাটার্ন বোঝার পাশাপশি মূল বই থেকে কোন টপিকগুলো আগে পড়ে ফেলতে হবে এটা বোঝা যাবে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে বাংলা পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাংলার প্রিপারেশন নিতে গদ্য, পদ্য, লেখক পরিচিতগুলো ভালো ভাবে পড়বে। সাথে বিগত সালের নার্সিং ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বেশি করে পড়তে হবে।
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা উভয় পরীক্ষায় বাংলা থেকে ২০টি প্রশ্ন থাকে। সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, শুদ্ধ বানান, ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, সন্ধি, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, কারক ও বিভক্তি, সমাস, ণত্ব বিধান ও স্বত্ব বিধান, ধ্বনি পরিবর্তন, ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, শব্দের শ্রেণীবিভাগ, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, পারিভাষিক শব্দ এগুলো থেকে বেশী প্রশ্ন আসে।
বাংলার জন্য সহায়ক বই হিসেবে ‘বাংলা বিচিত্রা’ বইটি ভালো। বইটিতে বিষয়ভিত্তিক বেসিক কথাবার্তার পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন একজায়গায় করা আছে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে ইংরেজি পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য ইংরেজির প্রিপারেশন নিতে বিগত সালের নার্সিং ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বেশি করে পড়তে হবে। ইংরেজির জন্য বেসিক গ্রামার থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। মাঝে মাঝে হুবহু একই প্রশ্নও তুলে দেওয়া হয়। তাই বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা করার পাশাপাশি টপিকগুলো পড়ে ফেলতে হবে।
টপিক ধরে পড়তে নবম-দশম বা ইন্টারমিডিয়েটের ইংরেজির যেকোনো একটি গ্রামার বই ফলো করলেই হবে। নার্সিং এ ইংরেজির অনেক বেশি কঠিন প্রশ্ন এখানে হয় না। ইংরেজির জন্য বেসিক জ্ঞান থাকলেই হয়। কিন্তু দেখে যায় ইংরেজিতেই সবথেকে বেশি ছাত্র-ছাত্রী খারাপ করে। তাই ইংরেজির বেসিক দুর্বল থাকলে বেশি বেশি প্র্যাকটিস করবে; এতে কম সময়ে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা উভয় পরীক্ষায় ইংরেজি থেকে ২০টি প্রশ্ন থাকে। ইংরেজীর বাধাধরা কোন সিলেবাস নেই। বেশি গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো হলো: Article , Parts Of Speech, Antonyms, Right form of verbs, Tense, Transformation of sentence, Voice Change, Preposition, Synonyms, Degree of comparison, Spelling, Translation, Vocabulary, Gender, Tag question, Phrase and idioms, Group verb, Appropriate preposition, completing sentence।
ইংরেজির জন্য সহায়ক বই হিসেবে ‘English Bichitra’ বইটি ভালো। বইটিতে বিষয়ভিত্তিক বেসিক কথাবার্তার পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন একজায়গায় করা আছে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে গণিত পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য গণিতের প্রিপারেশন নিতে নিয়মিত গণিত অনুশীলন করতে হবে। নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় গাণিতিক সমস্যা খুব কম আসে। কোনো Higher Math / উচ্চতর গণিত থেকে প্রশ্ন আসে না। বেসিক গণিত গুলাই বেশি আসে।
তাই গণিতের জন্য অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির মূলবইগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলেই গণিতের ভালো প্রিপারেশন নেওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন এনালাইসিস করলে টপিক ভিত্তিক প্যাটার্ন চোখে পড়বে: কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, কোনটা থেকে কম আসে, বা একেবারেই আসে না।
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা উভয় পরীক্ষায় গণিত থেকে প্রশ্ন থাকবে ১০টি। ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ, শতকরা, লাভ ক্ষতি, বয়স সমস্যা সম্পর্কিত অংক, গড়, বিভিন্ন বীজগাণিতিক সূত্রাবলী, বিভিন্ন কোণ ও কোণের প্রকারভেদ, ঐকিক নিয়ম, সমাধান, উৎপাদক, মান নির্ণয়, সূচক, গসাগু, ধারা, লসাগু, সমীকরণ থেকেই সাধারণত প্রশ্নকর্তারা প্রশ্ন করে থাকেন।
গণিতের প্রস্তুতিতে সহায়ক বই হিসেবে জয়কলির ‘Varsity Math’ বইটি ভালো। বইটিতে বিষয়ভিত্তিক কিছু কথাবার্তা দিয়ে চ্যাপ্টার শুরু করা ও বিগত বছরের প্রশ্ন টপিকের সাথে সাথে দেওয়া।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে পদার্থবিজ্ঞান পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের প্রিপারেশন নিতে পাঠ্যবই থেকে অধ্যায়ের সব টপিক সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে, প্রতিটি অধ্যায় পড়া শেষে সেই অধ্যায়ের অনুশীলনীতে যা যা আছে সব সমাধান করে ফেলতে হবে, অধ্যায় শেষে ‘এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য নামের একটা অংশ আছে, সেটা মুখস্থ করতে হবে, এবং উদাহরণের গাণিতিক সমস্যাগুলোর নিয়ম ভালো করে রপ্ত করবে।
নার্সিং-এ পদার্থবিজ্ঞান থেকে শুধুমাত্র বিএসসি কোর্সে প্রশ্ন থাকবে ১০টি। সাধারণত অংকের চেয়ে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন বেশি আসে। তাই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন পড়তে হবে ও উত্তর জানতে হবে। মূলত গতিবিদ্যা, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ, পদার্থের গাঠনিক ধর্ম, তরঙ্গ, আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব, তাপগতিবিদ্যা, স্থির তড়িৎ, চল তড়িৎ, জ্যৌর্তি বিজ্ঞান ইত্যাদি টপিক থেকে বেশী প্রশ্ন আসে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে রসায়ন বিজ্ঞান পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য রসায়নের প্রিপারেশন নিতে সবার আগে প্রথম পত্রের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ অধ্যায় ও দ্বিতীয় পত্রের ১ম, ৪র্থ, ৫ম অধ্যায় পড়ে ফেলবে। কারণ এগুলো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও এগুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়। এছাড়া দ্বিতীয় পত্রের ৩য় অধ্যায়ের ছোট ছোট অংকগুলো প্রায়ই আসে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে রসায়ন অংশে নম্বর তোলাটাই কিছুটা কঠিন। রসায়ন অংশে ভালো করতে হলে রসায়ন দ্বিতীয় পত্রকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এই অংশে জৈব যৌগ আছে যেটায় অনেকেরই সমস্যা থাকে। তাই আগেভাগেই সমস্যা সমাধান করে নেবে।
নার্সিং-এ রসায়ন বিজ্ঞান থেকে শুধুমাত্র বিএসসি কোর্সে প্রশ্ন থাকবে ১০টি। প্রথম পত্রের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ অধ্যায় ও দ্বিতীয় পত্রের ১ম, ৪র্থ, ৫ম অধ্যায়, ৩য় অধ্যায়ের ছোটো ছোটো অংক ছাড়াও বিক্রিয়া, রাসায়নিক বন্ধন, মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম, জৈব এসিড, তড়িৎ রাসায়নিক কোষ, অ্যালডিহাইড, হাইড্রোকার্বন, ল্যবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার, কর্মমুখী রসায়ন, পরিবেশ রসায়ন, জৈব রসায়ন ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে জীববিজ্ঞান পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য জীববিজ্ঞানের প্রস্তুতি নিতে প্রথমে প্রাণিবিজ্ঞান শেষ করবেন। মূল বইয়ের সংজ্ঞা, বইয়ের সব ছক, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য খুবই ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। প্রাণীর বিভিন্নতা ও শ্রেনী বিন্যাস, রক্ত ও সঞ্চালন, মানব জীবনের ধারাবাহিকতা, জীনতত্ত্ব ও বিবর্তন, বিশেষ করে মানবদেহ-সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সব তথ্য বারবার পড়ে মুখস্ত করে ফেলতে হবে।
প্রাণিবিজ্ঞান থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়, তাই প্রাণিবিজ্ঞানের অংশগুলি আগে পড়ে ফেলবেন। এরপর উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে উদ্ভিদের বিভিন্নতা, অণুজীব, জৈবনিক প্রক্রিয়া, কোষ ও এর গঠন, কোষ রসায়ন, অনুজীব, উদ্ভীদ শরীরতত্ত্ব, জীব প্রযুক্তি, জীবের পরিবেশ বিস্তার ও সংরক্ষণ, অর্থনৈতিকভাবে উপকারী উদ্ভিদ অংশ ভালোভাবে পড়বেন। কারণ এখান থেকেই প্রশ্নগুলো হয়ে থাকে। এছাড়াও কোন বিজ্ঞানী কোন মতবাদের জন্য বিখ্যাত, কোন সূত্রটি কত সালে আবিষ্কৃত হয়েছে এসব তথ্যও নখদর্পণে রাখবেন।
নার্সিং-এ জীববিজ্ঞান থেকে শুধুমাত্র বিএসসি কোর্সে প্রশ্ন থাকবে ১০টি। জীববিজ্ঞানে যদি আপনি সব উত্তর ঠিক করে আসতে পারেন তাহলে আপনার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। জীববিজ্ঞানে সবসময় একদম আপডেটেড সংস্করণ পড়বেন।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে সাধারণ বিজ্ঞান পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাধারণ বিজ্ঞানের প্রিপারেশন নিতে এসএসসি বোর্ড বই থেকে পুষ্টি ও ভিটামিন, খাদ্য, রক্ত, রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন, মানব দেহ, বিভিন্ন রোগের কারণ ও প্রতিকার, সালোকসংশ্লেষণ, জোয়ার ভাটা, ধাতব পদার্থ ও ধাতব পদার্থ, এসিড ক্ষার ও লবণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ উৎস, শব্দ ও তরঙ্গ, তাপ, তড়িৎ, ইলেকট্রনিক্স, তেজস্ক্রিয়তা, জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শক্তির উৎস ও রূপান্তর, এটমের গঠন, নবায়নযোগ্য শক্তি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আলো, চুম্বকত্ব, পরাগায়ন, বায়ুমণ্ডল টপিকগুলো সবার আগে পড়ে ফেলবেন। কারণ এখান থেকেই বেশি প্রশ্ন আসে।
শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে সাধারণ বিজ্ঞান থেকে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। সাধারণ বিজ্ঞানের জন্য এসএসসির বোর্ড বই বাদে অন্য কোন বই না পড়লে চলবে। তবে মেইন বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও ফলো করলে বিগত বছরের প্রশ্ন প্যাটার্ন বুঝতে পারবেন এবং ভালো চর্চা চালাতে পারবেন, যা আপনাকে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে সাধারণ জ্ঞান পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞানের প্রিপারেশন নিতে বাজার থেকে সাধারণ জ্ঞানের যেকোনো একটা বই কিনে প্রথমে বাংলাদেশ বিষয়াবলি টপিকটি আয়ত্ত করুন। এরপর রাজধানী, মুদ্রা, সদরদপ্তর, ঐতিহাসিক স্থান, বিবিধ আন্তর্জাতিক ও বিবিধ বাংলাদেশ, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমান, পদ্মা সেতু, বাংলাদেশের নদ নদী, নদীর উৎপত্তিস্থল ও মিলনস্থল, সম্পদ, বনাঞ্চল, সীমানা, ছিটমহল, কোভিড ১৯, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্পদ, কৃষি, বস্ত্র, নোবেল পুরস্কার, রোহিঙ্গা ইস্যু, গুরুত্বপূর্ণ দিবস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ভাস্কর ও ভাস্কর্য, চা, খেলাধুলা, বিভিন্ন পুরস্কার, বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সমূহ, মহাবিশ্ব, নারী ও শিশু, পাঠ, মৎস্য ও খনিজ ইত্যাদি বিষয় ভাল করে রপ্ত করুন। নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত সাম্প্রতিক বিশ্ব থেকে খুব কম প্রশ্ন আসে। তাই সাম্প্রতিক বিশ্ব নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও চলবে।
বিএসসিতে সাধারণ জ্ঞানে প্রশ্ন থাকবে ২০টি এবং ডিপ্লোমাতে প্রশ্ন থাকবে ২৫টি। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় এই অংশটুকু হেলাফেলা করতে। মাথায় রাখবেন, প্রতিটি নম্বরই গুরুত্বপূর্ণ। ০.১৫ নম্বরের জন্যেও আপনার সিরিয়াল শ’খানেক পিছিয়ে যেতে পারে!
তাই প্রতিদিন রুটিন করে অন্যান্য পড়াশোনার পাশাপাশি সাধারন জ্ঞান চর্চা বাড়ান। নিয়মিত জাতীয় দৈনিক গুলো পড়ুন। জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করুন।
নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতির জন্য মূল বইয়ের পাশাপাশি আর কী কী বই পড়তে হবে?
নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতির জন্য মূলবই এর পাশাপাশি প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে। প্রশ্নব্যাংক এনালাইসিস করলে মূলবইয়ের কোন অংশ থেকে প্রশ্নকর্তারা প্রশ্ন করে থাকেন এটা বুঝতে সুবিধা হয়। পরবর্তীতে মূল বই থেকে টপিকগুলো এক এক করে পড়ে ফেললে টপিক রিলেটেড জ্ঞান বাড়ে এবং পরীক্ষাভীতি দুর হয়।
অনেক সময় দেখা যায় এটা শুনে যেসব শিক্ষার্থীর ব্যাসিক দুর্বল তারা ঘাবড়িয়ে যান। কিন্তু ঘাবড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আপনি যদি প্রশ্নব্যাংক ঠিকমতো এনালাইসিস করতে পারেন, কোন ধরনের টপিক থেকে প্রশ্নকর্তারা কী ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন, এসব সম্পর্কে নিয়মিত পড়াশোনা করতে থাকেন, আর একটা সঠিক গাইডলাইন পান, আপনাকে সময় নষ্ট করে আরও কী কী পড়া যায় খুঁজে দেখতে হবে না, আপনার সামনে আপনাআপনি চলে আসবে। এভাবে একজন শিক্ষার্থীর ব্যাসিক কিছুটা দুর্বল থাকলেও এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
সঠিক গাইডলাইন একজন শিক্ষার্থীকে মনোবল যোগায়; প্রশ্নপদ্ধতির সাথে পরিচিত করে ও যাবতীয় পরীক্ষাভীতি দূর করে।
নিউরন নার্সিং-এ রাজু স্যার মূল বইয়ের ওপর সবথেকে বেশি জোর দিয়ে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা বেসিকের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এছাড়া অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসে রাজু স্যার Question Bank এনালাইসিস করে থাকেন। এতে শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে প্রশ্নের প্যাটার্ন ধরতে শেখে, মূল বই এর কোন টপিকগুলো ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে এ ব্যাপারে সঠিক গাইডলাইন পায়।
Question Bank এর জন্য যাতে আলাদা বই না কিনতে হয় সেজন্য নিউরন কোচিং থেকে বিগত বছরের প্রশ্নের পিডিএফ দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সহায়ক বই হিসেবে রাজু স্যারের নিউরন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ভর্তি গাইড ও নিউরন বিএসসি ইন নার্সিং ভর্তি গাইড অসাধারণ। এখানে আছে অধ্যায়ভিত্তিক সারাংশ এবং বিগত বছরের প্রশ্নের প্যাটার্ন মিলিয়ে নতুন সম্ভাব্য প্রশ্ন। নিউরন কোচিং-এ প্রশ্নব্যাংক এনালাইসিসের সময় প্রশ্নের সাথে Answer Sheet মিলিয়ে পড়ানো হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন ও তার উত্তর সম্পর্কে সম্যক ধারণা পায়।
প্রশ্নের ধরন দেখে প্রশ্ন সম্পর্কে আইডিয়া পেতে ও আরও প্র্যাকটিস করতে বাজার থেকে যেকোনো একটি গাইড কিনুন। কোন ভর্তি গাইডটি ভালো? বাজার থেকে যাচাই করে কোনো একটি গাইড কিনে প্র্যাকটিস করলেই হচ্ছে। তবে সহযোগী বই বা গাইডবই হিসেবে রাজু স্যারের নিউরন ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ভর্তি গাইড ও নিউরন বিএসসি ইন নার্সিং ভর্তি গাইড অন্যতম।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মূল বইয়ের সাথে আর কী বই পড়বেন?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মূল বইয়ের পাশপাশি আর যে বইগুলো যেভাবে পড়বেন তা পয়েন্টাকারে নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রশ্নব্যাংক ও মডেল টেস্ট সমাধান করবেন
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রশ্নব্যাংক ও মডেল টেস্টের বই কিনতে হবে। নার্সিং-এ চান্স পেতে নিয়মিত MCQ পরীক্ষা দিতে হবে। আর একারণে প্রয়োজন প্রশ্নব্যাংক। বাজার থেকে এমন একটি প্রশ্নব্যাংক হাতে নিন যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল সেশনের নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন রয়েছে এবং ব্যাখ্যাসহ উত্তর রয়েছে।
মনে রাখবেন, প্রশ্ন কখনো হুবহু প্রশ্নব্যাংক থেকে আসে না। কিন্তু একই টপিক থেকে অনেক বেশি প্রশ্ন রিপিট হয়। তাই প্রশ্নব্যাংকে থাকা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে মূল বইয়ের কোন জায়গা থেকে সাধারণত প্রশ্ন হয়ে থাকে তা চিহ্নিত করা সহজ হয়। তাই প্রথমেই মূল বই থেকে টপিকগুলো ভালো করে পড়ে ফেলতে হবে। এরপর বেশি বেশি প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। আর এখানেই কাজে আসবে মডেল টেস্টের বই। প্রশ্নব্যাংকের সাথে আপনি বাজার থেকে যেকোনো একটি মডেল টেস্টের বই কিনে সময় ধরে ধরে নিয়মিত MCQ প্র্যাকটিস করতে থাকবেন। পরবর্তীতে ভুলগুলো চিহ্নিত করে বই থেকে মূল টপিকটি আবার পড়ে ফেলবেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো চিহ্নিত করে বারবার পড়তে থাকলে পরবর্তীতে ঐসব টপিকের প্রশ্ন সমাধান করতে বেগ পেতে হবে না।
২. কোচিং এর মডেল টেস্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করবেন
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কোচিং এর মডেল টেস্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন। এতে সময় বেঁধে পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাসের পাশাপাশি নিজেকে পরীক্ষার পরিবেশে প্রস্তুত করতে পারবেন। যারা বাড়িতে বসে প্রিপারেশন নেবেন, তাদের জন্য অনলাইন মডেল টেস্ট ভালো অপশন। তবে অনলাইনে শুধু পরীক্ষা দিয়েই বসে থাকবেন না। কোন প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছেন সেটি আবার দেখুন। পাঠ্যবই খুলে যে টপিক থেকে প্রশ্নটি করা হয়েছে, সেটি পড়ুন। আবার প্রশ্ন দেখুন। এভাবে প্রশ্ন আর উত্তরের সাথে নিজেকে পরিচিত করুন। পরবর্তীতে ঐ টপিক থেকে কোন প্রশ্ন আপনার মিস হবে না।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশোনা করলে ও নিয়মিত পরীক্ষা দিতে থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নার্সিং-এ চান্স পেতে কোচিং বাদেও বাসায় নিজের মতো করে প্রিপারেশন নিয়ে একজন শিক্ষার্থী চান্স পেতে পারেন।
তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে, কোচিং এ পড়ুক বা নিজে নিজে বাসায় পড়ুক, প্রতিদিন পড়তে হবে, সময়ের প্রয়োজন অনুধাবন করে নিয়মানুবর্তিতার সাথে পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা, পরিমিত ঘুম ও সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া একেবারে সহজ হবে।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য যেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে:
১. নিয়মিত পরিশ্রম করতে হবে
নার্সিং-এ চান্স পেতে নিয়মিত নিয়মিত পরিশ্রম করতে হবে: প্রতিদিন অধ্যবসায় করুন। নার্সিং এ পড়াশোনা করলে আপনাকে নিয়মিত পড়াশোনা করতেই হবে। আপনি যদি ভাবেন চান্স পেলেই জীবন থেকে পড়াশোনা শেষ, তাহলে ভুল করবেন। তবে নার্সিং পেশা যেহেতু অনেক বেশি প্র্যাক্টিক্যাল, আপনাকে থিওরি কম, প্র্যাক্টিক্যালই বেশি পড়তে হবে, যে কারণে পড়াশোনা বোরিং হবে না।
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, চান্স পেলে পড়াশোনা শেষ হবে না, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত পড়াশোনা আপনাকে করতেই হবে। তাই পড়াশোনার অভ্যাসের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন। আদতে লাভ আপনারই।
ঘন্টা হিসেবে পড়াশোনা না করে যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ পড়ুন। সপ্তাহে কী কী পড়বেন ঠিক করুন। এরপর প্রতিদিনের একটা রুটিন সাজিয়ে ফেলুন: আজকে এই চ্যাপ্টারটা পড়বো, কালকে এই টপিকটা শেষ করবো এবং এভাবে পুরো সপ্তাহে এই কয়টা বইয়ের এই এই পার্ট কমপ্লিট করে ফেলব। সপ্তাহান্তে একবার অগ্রগতি দেখুন। যে সকল বিষয় গুলো মনে রাখা বেশ কষ্টের সেগুলো ছড়া, ছন্দ সাজিয়ে পড়ুন। কঠিন বিষয়গুলো বারবার লিখে টার্মগুলোর সাথে পরিচিত হোন, সেগুলোকে আয়ত্বে নিয়ে আসুন। যা ভুল করছেন বা পড়তে বেশি সময় লাগছে, সেগুলোর প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ না করে সেগুলো কীভাবে স্মার্টলি হ্যান্ডেল করবেন সেদিকে নজর দিন।
২. মানসিক চাপ দূর করতে হবে
নার্সিং-এ চান্স পেতে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। আপনি যদি পড়াশোনা না করে চিন্তায় সময় অতিবাহিত করেন, সময় ও মানসিক ব্যালেন্স দুই-ই যাবে। চান্স না পেলে কী হবে না সেই দুঃচিন্তা না করে কীভাবে চান্স পাবেন সেটা চিন্তা করুন। আজ কোন টপিকটা শেষ করবেন, মডেল টেস্ট দেবেন, কোন খাবারটা খাবেন, এদিকে মনোনিবেশ করুন। মানসিক চাপ কমাতে পড়ার মাঝে বিরতি নিন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম করুন। লম্বা করে দম নিন এবং ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। অন্তত দিনে দশ বার এই এক্সারসাইজ করুন। মানসিক চাপ অনেক কমে যাবে। আর মানসিক চাপ কিছু থাকবেই। এটা জীবনের অংশ। আমাদের লক্ষ্য হবে মানসিক চাপ কমিয়ে বা চাপমুক্ত হয়ে জীবনে চলার পথে অগ্রসর হওয়া।
মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ১ পাতা ফ্রি হ্যান্ড রাইট করুন। যা মনে আসবে লিখুন; নেগেটিভ, পজিটিভ যেকোনো কথা। শর্ত একটাই: কাউকে দেখানো যাবে না কী লিখেছেন। এমনকি আপনি নিজেও পড়তে পারবেন না। এতে করে আপনার নেগেটিভ এনার্জি রিলিজড হবে, মানসিক চাপ দূর হবে, আপনি চাঙ্গা অনুভব করবেন, এবং পড়াশোনার নতুন উদ্যম পাবেন।
৩. সপ্তাহে একদিন রেস্ট নিন
নার্সিং-এ চান্স পেতে সপ্তাহে একদিন রেস্ট নিন। ব্যায়াম, ধ্যান বা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানোর মতো কার্যকলাপে অংশ নিন। সপ্তাহে একদিন পড়াশোনা থেকে এরকম বিরতি নিলে আপনার ব্রেইন ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রিল্যাক্স করতে পারবে। এসময় ঘরে থাকার চাইতে ঘরের বাহিরে সময় কাটান। এতে আপনি সতেজ ও চাঙ্গা অনুভব করবেন, মানসিক চাপও কমবে। এমনকি প্রতিদিন একবার বাইরে বের হোন। শরীরে আলো-বাতাস লাগান।
৪. আত্মবিশ্বাসী হোন ও ইতিবাচক মনোভাব রাখুন
নার্সিং-এ চান্স পেতে আত্মবিশ্বাসী হোন। মনে রাখবেন, আপনার প্রতিযোগী সবাই না। আপনি যেভাবে পড়াশোনা করবেন, নিজেকে বিষয়ভিত্তিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন, তার ওপর নির্ভর করবে আপনার প্রতিযোগী কত।
নিয়মিত নিজের সাথে কথা বলুন। কোন জায়গায় নিজেকে দুর্বল মনে করছেন চিহ্নিত করুন। সেটা দূর করতে কী করা প্রয়োজন ভাবুন এবং কাজ করুন। চিন্তা কম করে কাজ বেশি করুন। নিজের সম্পর্কে খারাপ ধারণাগুলো পরিবর্তন করুন। কোনো বিষয়েই নিজেকে দোষারোপ না করে বরং কীভাবে চেষ্টা করলে কাজটা করতে পারবেন, পড়াটা মুখস্ত করতে পারবেন সেটা দেখুন। নিজের প্রতি সবসময় আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব রাখুন।
ইতিবাচক মানসিকতা মানুষকে নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত চাপ বা আত্ম-সন্দেহ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি আপনার কর্মক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আপনার প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করুন এবং বিশ্বাস করুন যে আপনার প্রচেষ্টা ইতিবাচক ফলাফল দেবে।
৫. নিয়মিত শরীরচর্চা, পরিমিত ঘুম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
নার্সিং-এ চান্স পেতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে, মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ সচল রাখে। ফলে স্মৃতি ধরে রাখাও অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। তবে এজন্য আপনাকে নিয়মিত জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত কিছু সময় হাঁটলে কিংবা সাইকেল চালালেই উপকৃত হবেন। এছাড়াও নিয়মিত শরীরচর্চা মনোযোগ বৃদ্ধি করে। মনও ভালো রাখে।
নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাবেন এবং ঘুম যেন পরিমিত হয় এটি খেয়াল রাখবেন। পরিমিত ঘুম আপনাকে একটা নির্দিষ্ট রুটিনে বাঁধবে। অনেক শিক্ষার্থী রুটিনমাফিক চলাফেরা করতে চান না। একধরনের বিপ্লবী রোমান্টিক আচরণ করেন অনিয়মিত জীবন পরিচালনা করে। কিন্তু দেখুন, আপনি যখন রুটিনমাফিক চলাফেরা করছেন, আপনার কাছে বেশি সময় থাকছে সবকিছু করার জন্য, কারণ আপনার মাসল মেমোরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ সময়ে ঐ কাজটি আপনার সচেতন সিগনাল ছাড়াই করে ফেলছে। ফলে আপনার সময় বাঁচছে এবং আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন সেই সময়ে আপনি কী করবেন।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কীভাবে কোচিং বাছাই করবে?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোচিং এ পড়ানোর মান, সঠিক গাইডলাইন, নিয়মিত মডেল টেস্ট, অতিরিক্ত ক্লাস এসব বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। নিচে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য যেভাবে কোচিং বাছাই করবেন তা পয়েন্টাকারে উল্লেখ করা হলো:
- নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোচিং এর পড়ানোর মান যেন ভালো হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। ভালো পড়ানোর মানের কারণে আপনার নিজেরও ভালো লাগবে। তবে একটা কোচিং বা ক্লাসরুমে তিনধরনের স্টুডেন্ট থাকে। টপ ১৫% শিক্ষকরা যা পড়ান, যেভাবে পড়ান তার সাথে সাথে এবং আগে আগে থাকেন, তারা আন্ডারসার্ভড হন, বটম ২৫% পড়াশোনা করতে চান না, তাদের নিয়ে অবশ্য সব শিক্ষকরা কাজ করেন না, আর মাঝের ৬০% শিক্ষকদের সাথে বা একটু আগে-পিছে পড়াশোনা করেন। সবার আগে তাই নির্বাচন করুন আপনি কোন দলে আছেন। এরপর আপনার প্রয়োজন মিটবে ঠিক কী ধরনের কোচিং আর গাইডলাইন পেলে সেটি চিহ্নিত করুন। সবশেষে আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারে এমন কোচিং বেছে ভর্তি হয়ে যান।
- নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পড়াশোনা ও লাইফস্টাইল নিয়ে সঠিক গাইডলাইন পাচ্ছেন এরকম কোচিং নির্বাচন করুন। ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ছাত্র-ছাত্রী এসময় গ্রাম থেকে শহরে আসে, টিনএইজ বয়সের অন্যান্য চাহিদা মেটানোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু মনে রাখবেন এই সময়টা খুব অল্প এবং আপনাকে এটা ব্যয় করতে হবে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়ার সমস্ত প্রিপারেশনের পেছনে। অবশ্যই আপনি ঘুরবেন, ফিরবেন, সময় কাটাবেন প্রিয় সঙ্গে, তবে তা যেন কোনোভাবেই পড়াশোনার প্রধান উদ্দেশ্য থেকে আপনাকে বিচ্যুত না করে।
- নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিয়মিত মডেল টেস্ট ও অতিরিক্ত ক্লাস নিশ্চিত করছে এরকম কোচিং এ ভর্তি হোন। নিয়মিত মডেল টেস্ট আপনার পরীক্ষা ভীতি দূর করবে আর অতিরিক্ত ক্লাস আপনার বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আপনাকে সাহায্য করবে। তাই যে কোচিং এ ভর্তি হচ্ছেন, কোচিং প্রধানের সাথে সরাসরি কথা বলুন মডেল টেস্ট ও অতিরিক্ত ক্লাস সম্পর্কে।
আপনি যে পরিবেশে নার্সিং এর প্রিপারেশন নিচ্ছেন, যে কোচিং এ ক্লাস করছেন, পরীক্ষা দিচ্ছেন, সেখানে যদি কম্পিটিটিভ পরিবেশ না থাকে, সবার সিরিয়াসনেস না থাকে, তাহলে সেই কোচিং এ ক্লাস না করা ভালো। তাই কোচিং এর পড়ানোর মান, সঠিক গাইডলাইন দেওয়ার মতো মেন্টর, নিয়মিত মডেল টেস্ট, অতিরিক্ত ক্লাস নিশ্চিতের পাশাপাশি কোচিং এর কম্পিটিটিভ পরিবেশও নিশ্চিত করে সেই কোচিং এ ভর্তি হোন।
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করবেন নাকি বাসায় প্রস্তুতি নেবেন?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য আপনি কোচিং করতে পারেন, আবার নিজে নিজে বাসায়ও প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে বাসায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিজের ইমোশনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে এটা হয় না বিধায়, সঠিক গাইডলাইন ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য কোচিং এ যেতে পারেন। কোচিং থেকে আপনি একটি গাইডলাইন পাবেন, আবার আপনার আশেপাশের পরিচিত শিক্ষক, বড় ভাই, কিংবা আত্মীয়স্বজন, সিনিয়র ব্যাক্তির কাছ থেকে গাইডলাইন নিতে পারেন, এমনকি ইন্টারনেট থেকেও আপনি আপনার প্রয়োজনীয় গাইডলাইনটি অনেক সময় পেয়ে যেতে পারেন।
তবে যার কাছ থেকেই গাইডলাইন নেবেন, তিনি যেন নার্সিং পেশা, ক্যারিয়ার ও ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। আর আপনি যার কাছ থেকেই গাইডলাইন নিন না কেন, নিজে থেকে নিয়মিত পড়াশোনা না করলে চান্স পাবেন না। চান্স তারই হবে যে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করে, কোচিং করুক বা নিজে পড়ুক, নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করে পরীক্ষার হলে ঢুকছে। আপনার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, বোরিং লাগা, সোশ্যাল মিডিয়ায় টাইম ব্যয় করা থেকে নার্সিং এ চান্স পাওয়াটা আপনার কাছে বড়ো মনে হলে অবশ্যই আপনি নিজেকে পড়ার টেবিলে আবিষ্কার করবেন। মনে রাখবেন, কেউ-ই আপনার কোনো কাজে আসবে না যদি না আপনি নিজে নিজের কাজে আসেন।
কীভাবে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ইন্টারনেটকে কাজে লাগাবেন?
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন টপিকের কনসেপ্ট ক্লিয়ারের জন্য ভিডিও দেখুন। ইউটিউবে অধ্যায়ভিত্তিক ফ্রি ভিডিও লেকচার দেখুন। শুধুমাত্র নিয়মিত অনলাইন ক্লাসগুলোয় মনোযোগ দিয়ে, ইন্টারনেটের রিসোর্স ব্যবহার করে, সে অনুযায়ী গুছিয়ে নোট তৈরি করে সেগুলো ব্যবহার করে আপনি নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালো একটি প্রিপারেশন নিতে পারেন। সর্বোপরি নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট, ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং ইন্টারেক্টিভ কুইজের মতো অনলাইন সংস্থানগুলির সুবিধা নিন।
নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতির জন্য সবথেকে বেশি মূলবই বা পাঠ্যবই পড়তে হবে। এরপর বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে। যেসব টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে সেগুলো বাছাই করে টপিকগুলোকে ঝালাই করুন। যেসব যায়গায় বেসিক দুর্বল, কোচিং এর শিক্ষক বা অনলাইন থেকে সহায়তা নিন। সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগান। সাফল্য আসবেই।