নার্সিং-এ পড়াশোনা করলে দেশে ও বিদেশে ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন নার্স দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে (অপারেশন থিয়েটার/OT, ICU, CCU, HDU, NICU, ইত্যাদি) নার্স মিডওয়াইফ, নার্স অ্যানেস্থেটিস্ট, সাইকিয়াট্রিক মেন্টাল হেলথ নার্স প্র্যাকটিশনার, ক্লিনিকাল নার্স বিশেষজ্ঞ, ট্রমা নার্স, ডায়ালাইসিস নার্স, ইনফেকশন কন্ট্রোল/প্রিভেনশন নার্স, নবজাতক নার্সসহ আরও অনেক পোস্টে কাজ করতে পারেন। 

কাজের ক্ষেত্র ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনি Assistant Nurse, Staff Nurse, Senior Staff Nurse (SSN), Nursing Supervisor, Deputy Nursing Superintendent, Nursing Superintendent হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি শিক্ষকতা পেশায় নার্সিং ইনস্টিটিউট বা কলেজে Nursing Lecturer, Nursing Assistant Professor, Professor, Vice Principal, Principal হিসেবে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাবেন। 

এছাড়া নার্সিং অধিদপ্তরে Director, Deputy Director (Admin), Deputy Director (Education), Project Officer, Assistant Director (Admin), Assistant Director (Education) পদেও উচ্চ মর্যাদায় চাকরি করতে পারবেন।

নার্সিং পাশ করার পর দেশে ভবিষ্যৎ কেমন?

নার্সিং পাশ করার পর দেশে ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হওয়ার পাশাপাশি আপনি যেমন শিক্ষকতা পেশা বেছে নিতে পারবেন, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিতে ঢোকার পাশাপাশি তেমনি নার্সিং অধিদপ্তরেও কাজ করতে পারবেন। 

নার্সিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা। আমাদের দেশে এই পেশাটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নার্সিং এর তিনটি কোর্স রয়েছে:

১. বিএসসি ইন নার্সিং

২. ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি

৩. ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি

চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স অথবা তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি/ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করার পরে নার্স হওয়া যায়। তিনটি নার্সিং কোর্সের ক্ষেত্রেই কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পরে Bangladesh Nursing and Midwifery Council কর্তৃক অনুষ্ঠিত রেজিষ্ট্রেশন/লাইসেন্সিং/RN পরীক্ষায় পাশ করলে/কৃতকার্য হলে, পরবর্তীতে সরকারি/বেসরকারি জবের জন্য আবেদন করা যায়। 

এছাড়া আপনি মাতৃসদন কেন্দ্রে বা কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নার্স হিসেবে চাকরি পাবেন। মাতৃসদন কেন্দ্রে আপনি নার্সিং সেবা ও মাতৃত্ব সম্পর্কিত সেবা প্রদান করবেন। আর কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা বা প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহ করবেন।

দেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন?

দেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বর্তমানে আশাব্যঞ্জক। আগে সুযোগ-সুবিধা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে: আগে স্নাতকোত্তর করার জন্য দেশে কোনো নার্সিং কলেজ ছিল না, বর্তমানে জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (নিয়ানার), কুমুদিনী নার্সিং কলেজ থেকে এমএসসি নার্সিং কোর্স করা যায়। 

শুধু তাই-ই নয়, সম্প্রতি সরকারিভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য আরও নয়টি কলেজ ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক নার্সিং কলেজে এমএসসি কোর্স চালু করার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে। নার্সিংয়ে জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (নিয়ানার) মাস্টার্স করার পাশাপাশি নার্সরা বিএসএমএমইউর অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) থেকেও সরকারিভাবে পাবলিক হেলথের ওপর চারটি বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারেন। 

নিপসমই শুধু এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে ডাক্তার এবং নার্স একই সাথে একই ক্লাসরুম শেয়ার করার সুযোগ পান। তা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়, যেমন, জেরোন্টোলজি অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক ওয়েলফেয়ার, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়ার্ক, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে নার্সরা তাদের স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পান।

বাংলাদেশে নার্সদের চাহিদা কেমন?

বাংলাদেশে নার্সদের চাহিদা সীমাহীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ডাক্তারের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৭ জন। এই সংখ্যক চিকিৎসকের বিপরীতে দেশে ৩ লাখের বেশি নার্সের প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন করে নার্স থাকা রীতি। কিন্তু বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) তথ্য অনুসারে, বিগত তথ্য অনুযায়ী নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৭৩৯ জন। অর্থাৎ দেশে প্রয়োজনের মাত্র ২৭ শতাংশ নার্স রয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে ২৭১টি বিএসসি ও ৫৪৭টি ডিপ্লোমা নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজ (সরকারি ও বেসরকারি) রয়েছে। এসব কলেজে আসন আছে ৩৯ হাজারের বেশি। আর প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন প্রায় ১৫ হাজার নার্স। এছাড়াও নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম বলেন, কলেজগুলোতেও আসনসংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ৩০ হাজার নার্স স্নাতক সম্পন্ন করবেন। এজন্য নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজগুলোর চাহিদা দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী।

অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, দিন দিন বাড়ছে আমাদের জনসংখ্যা, বাড়ছে হাসপাতাল। আমাদের দেশে এখন প্রায় সব শহরেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নার্সের চাহিদাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী একটি দেশে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩ । কিন্তু বাংলাদেশে এ অনুপাত ২:১ । তাই বাংলাদেশে নার্সদের চাহিদা অনেক।

বাংলাদেশে নার্সদের বেতন কত?

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে একজন নার্স ১০ম গ্রেডের কর্মচারী হিসেবে চাকরিতে ঢোকেন। সে সময় তার বেতন হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সময়, অভিজ্ঞতা, ও উচ্চতর ডিগ্রির ওপর ভিত্তি করে বেতন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে নার্সদের সুনির্দিষ্ট কোনো বেতন কাঠামো নেই। হাসপাতালভেদে তাদের বেতন ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

BSc in Nursing পড়ে কি সরকারি চাকরি করতে পারবেন?

হ্যাঁ, BSc in Nursing পড়ে সরকারি চাকরি করতে পারবেন। BSc in Nursing এবং অনার্স এর মান সমান; তাই একজন BSc Nurse, একজন অনার্স পাশ করা স্টুডেন্টের মতো সব জায়গায় পরীক্ষা দিতে পারবেন। আপনি বিসিএস (BCS) পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সব সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারবেন। 

নার্সিং পাশ করার পর বিদেশে ভবিষ্যৎ কেমন?

বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়ে নার্সিং এর চাহিদা দেশে-বিদেশে সমান হারে বাড়ছে। সরকারি, বেসরকারি, বা নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা এমএসসি, পিএইচডি ও অন্যান্য ডিগ্রি নিতে বিদেশ যান। জীবনযাত্রা, কাজ ও কাজের পরিবেশ, বেতন, চাহিদা সবকিছুর মানই আশাব্যঞ্জক। এছাড়া দেশের ডিগ্রি নিয়েও সরাসরি বিদেশে পাড়ি জমাতে পারবেন। কাজ করতে পারবেন নার্স অ্যানেস্থেটিস্ট, সাইকিয়াট্রিক মেন্টাল হেলথ নার্স প্র্যাকটিশনার, নার্স মিডওয়াইফ ছাড়াও নানা পদে।

বিদেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন?

বিদেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অনেক। শিক্ষার্থীরা এমএসসি, পিএইচডি ও অন্যান্য ডিগ্রি নিতে বিদেশ যান। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে যে দেশে যাবেন, সে দেশের প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণের মাধ্যমে স্কলারশিপ নিয়ে যেতে পারবেন। তা ছাড়া বিভিন্ন কলেজে স্কলারশিপ দিলে শর্ত পূরণের মাধ্যমে সরকারিভাবেও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া য়ায়। বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, কোরিয়া ও চীনকে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশি অগ্রাধিকার দেন।

তবে বিদেশ থেকে ডিগ্রি ফেরত নার্সদের এখনও উচ্চমানের সুযোগ-সুবিধা দেশে পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য দেখা যায়, উচ্চশিক্ষা নেয়া নার্সরা দেশে ফিরে অসন্তুষ্টিতে ভোগেন, অনেকাংশে আবার কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমান। 

বিদেশে বাংলাদেশী নার্সদের চাহিদা কেমন? 

বিদেশে বাংলাদেশি নার্সদের চাহিদা ভালো, বিশেষত যারা প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, পেশাগত পরিবেশ এবং ভাষাগত দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাদের জন্য। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ও ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের (বোয়েসেল) তথ্যমতে, গত এক বছরে কুয়েত ও সৌদি আরবে প্রায় ১ হাজার নার্স পাঠানো হয়। তবে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, পেশাগত পরিবেশ এবং ভাষাগত দুর্বলতার কারণে ২০০ জনকে দেশে ফিরতে হয়েছে। এ ছাড়া জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজারের মতো দক্ষ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। দক্ষতার অভাবে নার্সরা আবেদন করতে পারছেন না। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া ২ হাজার নার্স নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে প্রার্থীকে ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার কোর্স ‘আইইএলটিএস’ থাকা লাগবে। এমন দক্ষ নার্স মিলছে না। এই সংকট নিরসনে কানাডা ও যুক্তরাজ্য ঢাকায় নার্সিং প্রশিক্ষণ একাডেমি তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকও হয়েছে।”

এ থেকে খুব স্পষ্টভাবে নার্সিং সেক্টরের অপার সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে যায়। ভাষাগত দুর্বলতা ও পেশাগত দক্ষতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আপনি বিদেশেও নিজের ভালো চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হবেন।   

বিদেশে নার্সদের বেতন কত?

তিন-চার বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নার্স ও টেকনিশিয়ানদের মাসে ৭৩ থেকে ৯০ হাজার টাকা বেতন দেয় কুয়েত, যেখানে সৌদি আরব দেয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা। তবে কাজের অভিজ্ঞতা ও স্পেশালিটি অনুযায়ী বেতন আরও কম-বেশি হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ও অন্যান্য দেশে আপনি আপনার নার্সিং ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। 

নার্সিং পড়ার কী কী সুবিধা রয়েছে?

নার্সিং পড়ার সুবিধা সীমাহীন। দেশে-বিদেশে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। নার্সিং পড়ার সবথেকে বড়ো সুবিধা চারটি:  

১. নার্সিং অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা। 

২. নার্সিং-এর উচ্চশিক্ষার অফুরন্ত সুযোগ। 

৩. নার্সিং এ পড়ে বিসিএস এর মতো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। 

৪. নার্সিং পড়ে কখনও বেকার থাকতে হয় না।

BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর কী কী চাকরি করা যায়?

BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন ধরনের চাকরির যে যে সুযোগ আছে তা পয়েন্টাকারে উল্লেখ করা হলো:

  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর BPSC এর অধীনে General BCS এর মাধ্যমে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স ইত্যাদি সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট সমূহে শিক্ষকতা করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর BPSC এর মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ও উত্তীর্ণ হয়ে সরাসরি নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এ যোগদান করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর সরকারি হাসপাতালে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ৫ বছর পর দেশের বিভিন্ন নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউট এ শিক্ষকতা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া সরাসরি শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর WHO, UNICEF, UNFPA, ICDDRB, MSF, IOM, ACP, BRAC, RED CRESCENT সহ বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নার্সিং কর্মকর্তা, নার্স গবেষক, নার্স কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করার করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ইপিজেড গুলোতে নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সরাসরি Lieutenant হিসেবে ও নৌবাহিনীতে নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার এ নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বিভিন্ন ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার, সিনিয়র অফিসার, অফিসার (জেনারেল), অফিসার (ক্যাশ), অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর দুর্নীতি দমন কমিশনে পরিচালক বা বিভিন্ন পদে চাকরি করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক দপ্তরে চাকরি করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর দেশের স্বনামধন্য বড় হাসপাতালগুলোতে নার্সিং কর্মকর্তা, নার্স ম্যানেজার, নার্সিং সুপারভাইজার, নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করা যায়।
  • BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর বিদেশে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়, যেমন: কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই, লিবিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি।

নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক পেশা। পৃথিবীব্যাপী এর অনেক চাহিদা রয়েছে এবং অনেক যায়গায় চাকরির সুযোগ রয়েছে। নিচে নার্সিং পড়ার পর পৃথিবীব্যাপী কী কী জব করতে পারবেন, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:

নার্স শ্রেণীবিভাগকাজের ধরণ
নার্স অ্যানেস্থেটিস্টএকজন নার্স অ্যানেস্থেটিস্ট একজন উন্নত অনুশীলন নার্স যিনি অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য অ্যানেস্থেশিয়া পরিচালনা করেন।
সাইকিয়াট্রিক মেন্টাল হেলথ নার্স প্র্যাকটিশনারএকজন সাইকিয়াট্রিক-মেন্টাল হেলথ নার্স প্র্যাকটিশনার (PMHNP ) হল এক ধরনের উন্নত প্র্যাকটিস রেজিস্টার্ড নার্স যারা রোগী ও পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষিত।
পারিবারিক নার্স অনুশীলনকারীএকজন ফ্যামিলি নার্স প্র্যাকটিশনার (FNP) বয়স, লিঙ্গ, রোগভেদে ব্যক্তি এবং পরিবারের জন্য অবিরাম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন।
নার্স মিডওয়াইফএকজন নার্স মিডওয়াইফ বা ধাত্রী গর্ভাবস্থায়, প্রসব বেদনা এবং প্রসবের প্রারম্ভিক অবস্থায় নারী এবং শিশুদের পরামর্শ, যত্ন এবং সহায়তা প্রদান করেন। তিনি গর্ভাবস্থার সময়ে নারীদেরকে তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন এবং স্বাস্থ্য ও শিশুর পরিচর্যা বিষয়ক উপদেশ প্রদান করেন।
ক্লিনিকাল নার্স বিশেষজ্ঞ (CNS)একজন ক্লিনিক্যাল নার্স স্পেশালিস্ট (CNS) হলেন একজন উন্নত প্র্যাকটিস নার্স যিনি নির্দিষ্ট শর্ত বা চিকিৎসার পথের সাথে সম্পর্কিত পরামর্শ প্রদান করতে পারেন।
ইনফরমেটিক্স নার্সজুডিথ রাই গ্রেভস এবং শিলা কর্কোরান এর মতে, নার্সিং ইনফরমেটিক্স স্বাস্থ্য তথ্যবিদ্যার এমন একটি শাখা যেখানে কম্পিউটার বিজ্ঞান, তথ্য বিজ্ঞান এবং নার্সিং বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটে, যা নার্সিং ডেটা, তথ্য, এবং জ্ঞানের ব্যবস্থাপনা এবং প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
নার্স শিক্ষাবিদএকজন নার্স শিক্ষাবিদ হলেন একজন নার্স যিনি অনুশীলনের পদে প্রবেশের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবহারিক নার্স (LPN) এবং নিবন্ধিত নার্সদের (RN) শেখান ও প্রস্তুত করেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত নার্সিং কর্মীদের অব্যাহত শিক্ষা প্রদানের জন্য তারা বিভিন্ন রোগীর যত্নের সেটিংসেও শিক্ষা দিতে পারেন।
নার্স গবেষকএকজন নার্স গবেষক হলেন একজন পেশাদার নার্স যিনি নার্সিং জ্ঞানকে এগিয়ে নিতে এবং রোগীর ফলাফল উন্নত করতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। 
ট্রমা নার্সট্রমা অনুভব করেছেন এমন রোগীদের যত্নে বিশেষজ্ঞ নার্স-ই হলেন ট্রমা নার্স।
পেডিয়াট্রিক নার্সনবজাতক এবং বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত শিশুদের যত্নের চারপাশে কিছু কাজ থাকে যা করে থাকেন একজন পেডিয়াট্রিক নার্স।
পাবলিক হেলথ নার্সপাবলিক হেলথ নার্স (PHN) বা জনস্বাস্থ্য নার্স হচ্ছে এক ধরনের নার্সিং বিশেষত্ব যা জনস্বাস্থ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। একজন পাবলিক হেলথ নার্স (PHN) বা কমিউনিটি হেলথ নার্স হওয়ার জন্য একজনকে অবশ্যই একজন নিবন্ধিত নার্স হতে হবে, যা রাষ্ট্র দ্বারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং অবশ্যই একটি স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। 

এছাড়া আপনি অ্যাকিউট কেয়ার নার্স, ডায়ালাইসিস নার্স, নার্স অ্যাডভোকেট, জেরিয়াট্রিক নার্স, অ্যাকিউট কেয়ার নার্স, ইনফেকশন কন্ট্রোল/প্রিভেনশন নার্স, নবজাতক নার্স, অনকোলজি নার্স ইত্যাদি নার্স হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন।

নতুনদের নার্সিংয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। আগে তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া নার্সিং পেশায় প্রচুর কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। দিন দিন হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশ ও দেশের বাইরে কাজের চাহিদা বাড়ছে। নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক মানের ভার্সেটাইল পেশা। এ বিষয়ে পড়ে যে কেউ যেমন নার্স হতে পারবেন, পাশাপাশি অন্য পেশায়ও সুইচ করতে পারবেন।

Diploma in Nursing Science and Midwifery কোর্স সম্পন্ন করার পর কী কী চাকরি করা যায়?

তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করার পর সরকারি ও বেসরকারি চাকরি করা যায়। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও বিএসসি ইন নার্সিং পাশ করে ক্লিনিকে বা হাসপাতালে চাকরির সম্ভাবনা সমান। যেহেতু এটি একটি ডিপ্লোমা কোর্স, তাই বিএসসির মতো সব ধরনের চাকরি করতে পারবেন না। তবে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স শেষে পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স করা যায়। তখন বিএসসির মতো সরকারি (যেমন BCS) ও বেসরকারি সব জায়গাতেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। এমনকি এর পর আপনি চাইলে চাইলে মাস্টার্স ও পিএইচডিও করতে পারবেন।

Diploma in Midwifery কোর্স সম্পন্ন করার পর কী কী চাকরি করা যায়?

তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করার পর হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সরকারি ও বেসরকারি চাকরি করা যায়।

Midwifery বা ধাত্রীবিদ্যা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি বিশেষায়িত মিডওয়াইফারি কোর্স, যাতে পড়াশোনা করে আপনি একজন প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ হতে পারেন। প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ ফ্যামিলি প্লানিং, প্রসব পূর্ব, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং প্রসবোত্তর সময়কালে মহিলাদের সহায়তা করেন এবং নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। একজন মিডওয়াইফের ভূমিকা বৈচিত্র্যময়: গর্ভবতী মহিলা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যপারে Support করা, কীভাবে healthy pregnancy বজায় রাখা যায় সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করা।

Diploma in Midwifery কোর্স সম্পন্ন করার পর কী কী চাকরি করা যায় যেকোনো ক্লিনিকে আপনি অনায়াসে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। যেহেতু এটি একটি ডিপ্লোমা কোর্স, তাই বিএসসির মতো সব ধরনের চাকরি করতে পারবেন না। তবে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স শেষে পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স করা যায়। তখন বিএসসির মতো সরকারি (যেমন BCS) ও বেসরকারি সব জায়গাতেই পরীক্ষা দিতে পারবেন।

ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি বা ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করার পরে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে?

হ্যাঁ, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি বা ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করার পরে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। তবে অবশ্যই আপনাকে সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমা শেষ করার পর পোস্ট বেসিক বিএসসি ও মাস্টার্স শেষ করতে হবে।

নার্সিং থেকে কি ডাক্তার হওয়া যায়? 

হ্যাঁ, নার্সিং থেকে ডাক্তার হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে আবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। তবে বিএসসি বা ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্স শেষ করার পর বয়স ও পরীক্ষার গ্রেডের কারণে বাংলাদেশে আপনাকে এই সুযোগ দেয়া হবে না। নার্স থেকে ডাক্তার হতে চাইলে আপনাকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য উন্নত দেশগুলো থেকে ডাক্তারি পড়তে হবে। 

বিএসসি নার্সিং এবং অনার্স কি একসাথে পড়া যায়?

না, অনার্স এবং বিএসসি নার্সিং একসাথে পড়া যায় না। আপনি নার্সিং ইন্সটিটিউট বা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই ভর্তি হোন, আপনার এইচএসসি ও এসএসসি মূল মার্কশীটটি উক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেবে। বিএসসি নার্সিং ভর্তির ক্ষেত্রে মূল মার্কশীট তো নেবে, সাথে এসএসসি, এইচএসসির মূল সনদপত্র (সার্টিফিকেট) টি নিয়ে যাবে।

ধরে নিলাম, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিএসসি নার্সিং এবং অনার্স দুইটি কোর্সেই আপনি ভর্তি হতে পারলেন। কিন্তু সময় বের করে অযথা দুইটি সমমানের ডিগ্রি নেওয়া পুরোপুরি অর্থহীন। এছাড়া আপনি অনার্সে ভর্তি হলে প্রতিদিন ক্লাস করতে হবে। বিভিন্ন এসাইনমেন্ট করতে হবে। নার্সিং পড়লেও পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ থাকবে। আর নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোনো শিক্ষক বিষয়টি জানলে আপনাকে বহিষ্কার করে দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও থাকছে।

তাই সময় ও অর্থ যেকোনো এক জায়গায় খরচ করুন। যেকোনো একদিকে ক্যারিয়ার গড়ুন। আর দুইটি কোর্সের পরই সরকারি বা বেসরকারি সব ধরনের চাকরির সুযোগ আপনার কাছে থাকছে, সেদিকে নজর দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *